• ঢাকা
  • শুক্রবার:২০২৩:ডিসেম্বর || ১৮:৫৯:৩৩
প্রকাশের সময় :
এপ্রিল ১৪, ২০২২,
১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট :
মে ১৩, ২০২২,
১০:২৩ অপরাহ্ন

৩৯৪ বার দেখা হয়েছে ।

জলবায়ু অভিঘাত হতে রক্ষায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়

জলবায়ু অভিঘাত হতে রক্ষায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়

জলবায়ুর প্রভাব প্রশমনের ওপর গত ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ খ্রি তারিখ জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ক্লাইমেন্ট চেঞ্জ (আইপিসিসি) ওয়াকিং গ্রুপ-২ প্রকাশিত প্রতিবেদন বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের পানির স্তর বাড়ার কারণে শতাব্দীর মাঝামাঝি বা শেষের দিকে বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি ২ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ কমতে পারে এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১ থেকে ২ মিলিয়ন মানুষ বাস্তচ্যুত হতে পারে এবং অতি দরিদ্র, আয় বৈষম্য ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়াও, ধান উৎপাদন ১২ থেকে ১৭ শতাংশ ও গম উৎপাদন ১২ থেকে ৬১ শতাংশ কমতে পারে মর্মে প্রতিবেদনে আশংকা করা হয়েছে। সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের নিম্নাঞ্চলের কৃষি জমি ৩১ থেকে ৪০ শতাংশ তলিয়ে যেতে পারে এবং সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্ধির ফলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দেশের এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ পরিকল্পনা পুনর্বিন্যাস করার প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিবেদনে গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এবং মানুষের ক্রমগত চাহিদার ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ পানি সংকটে পড়বে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গঙ্গা ও ব্রক্ষ্মপুত্র নদী অববাহিকায় ক্রমবর্ধমান বন্যার সৃষ্টি হবে।

জলবায়ুর এই প্রভাব মোকাবিলায় জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে বহুবিধ চুক্তি-প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৬) এ বহু আশা নিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ একত্রিত হয়েছিল। কিছু বিষয়ে কাগজে কলমে সমঝোতা আসলেও সার্বিক ফলাফল খুব বেশি অগ্রগতি হয়েছে বলে মিডিয়ায় উঠে আসেনি। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে চ্যালেঞ্জ বিরাজমান এর মধ্যে বাংলাদেশে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ এর মাত্রা বহুবিধ। জলবায়ু পরিবর্তনের এই পেক্ষাপটকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। ১৮৮০ সাল থেকে অদ্যবধি সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৮ ইঞ্চি। ভবিষ্যৎবাণী করা হচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে আরো প্রায় ১ ফুট। এ পরিসংখ্যান আমাদের সামনে এক ভয়ংকর আগামীর জন্য সতর্ক হবার সূত্র বলে দিচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে বাংলাদেশ, মালদ্বীপসহ সমুদ্রের নিকটবর্তী দেশগুলোর নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ ধরনের ভষংকর প্রভাব হতে পৃথিবী কি যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পেরেছে। আইপিসিসি এর প্রতিবেদনটি বেশ গুরুত্বসহকারে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়।

গত ২১ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখ দৈনিক ডেইলি স্টার পত্রিকায় একসময়ের প্রমত্ত ব্রক্ষ্মপুত্রের চিত্রটি কোনভাবে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নাই। চিত্রটিতে ব্রক্ষ্মপুত্রে পানি নেই। মানুষ পায়ে হেঁটে ব্রক্ষ্মপুত্র পার হচ্ছে। তারা গবাদি পশু নিয়ে নদী পার হচ্ছে। ব্রক্ষ্মপুত্রের বুক চিড়ে পায়ে হেটে নদী পারাপারের দৃশ্য দেখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ‘আমাদের ছোট নদী’র কথা মনে পড়ে যায়। এক সময়ের প্রবল প্রতাপশালী পদ্মাও যেন ব্রক্ষ্মপুত্রের মতো রবীন্দ্রনাথের ছোট নদীর সমপর্যায়ে উপনীত হয়েছে। পদ্মা আজ শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। পানি নেই, আছে ধু ধু বালুচর। ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর উপর দাঁড়ালে পদ্মার মৃতপ্রায় রুপ দেখা যাবে’। পদ্মার মৃতপ্রায় এই রুপের জন্য দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২৫টি শাখা নদী হারিয়ে গেছে। এ এলাকায় মানুষের জীবন-জীবিকা, কৃষি, শিল্প, বনজ, মৎস্য সম্পদ, পরিবেশ রক্ষা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপন্ন। বিশেষকরে যশোর এলাকায় ভবদহের জলাবদ্ধতা ও উপকূলীয় এলাকায় প্রতিনিয়ত দুর্যোগ উপকূলীয় মানুষের দুঃখ-দুর্দশা অবর্ণনীয়।

উপকূলীয় এলাকায় বাস্তুসংস্থানের সংকট ঘনীভূত। জোয়ারের তীব্রতা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও সামুদ্রিক জলোচ্ছাস এর প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌসুমি বৃষ্টিপাত এবং অসময়ে অতিবৃষ্টি নিত্যনিয়মিত। এ বছর অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিস্তার উজানে ভারতের অংশে হঠাৎ অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে ভারত তার গজলডোবা বাঁধ খুলে দেয়। উপচে পড়া অস্বাভাবিক পানির চাপ থাকায় তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দিলেও তিস্তা ব্যারেজের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত ফ্লাড বাইবাস সড়কের একাংশ ভেঙ্গে যায়। এতে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম আকস্মিক প্লাবিত হয়। পানির নিচে তলিয়ে যায় আমন ধানসহ ফসলের ক্ষেত। দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের জন্য অধিকমাত্রায় ভুগর্ভস্থপানি ব্যবহার করায় আর্সেনিকের পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এই এলাকার মানুষের জীবন জীবিকায় এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, অপরিশোধিত ও পয়ঃবর্জ্য পানি দূষণ তীব্রতর করেছে।

বিশ্বে দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আইপিসিসি এর ২০০৭ সালের ৪র্থ এসেসমেন্ট প্রতিবেদনে সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশ বাংলাদেশ। এর কারণ হিসেবে মূলত এর ভূপ্রকৃতি এবং ছোট ছোট পলি কণার দ্বারা সৃষ্ট জমির বিন্যাস। বঙ্গীয় ব-দ্বীপ (Ganges Delta বা Bengal Delta) পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। উত্তরের ভুটান, তিব্বত, ভারত, ও নেপাল থেকে সৃষ্ট নদীগুলো এই বদ্বীপের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। ভারত ও বাংলাদেশ জুড়ে এই বদ্বীপ হলেও বাংলাদেশ অংশের উপর দিয়ে গঙ্গা ও ব্রক্ষ্মপুত্র প্রধান দুটি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। গঙ্গা-ব্রক্ষ্মপুত্র ছাড়াও শত শত নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বাংলাদেশের উপর দিয়ে। নদীগুলো তাদের উৎসমুখ হতে পলি বহন করে আনছে। আঞ্চলিক উন্নয়ন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, বাংলাদেশের উজানে ভারতের নদী শাসন ও বাঁধ নির্মাণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনা যেমন হুমকির মুখে তেমনি প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের পৌনঃপুনিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সম্ভাব্য দুর্যোগের হাত হতে রক্ষা পেতে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে টেকসই রুপ দিতে শতবছরের মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান-২১০০ বা বদ্বীপ পরিকল্পনা হতে পারে আমাদের প্রত্যাশার জায়গা।

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে নোয়াখালীতে সেনাবাহিনীর এক মহড়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ুর অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে ডেল্টা প্লান-২১০০ এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ অঞ্চল। জলবায়ু অভিঘাত থেকে এ দেশকে বাঁচাতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই ইতোমধ্যেই আমরা অনেক উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি বাংলাদেশকে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করা এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম যদি সুন্দর জীবন পাই সেই লক্ষ্যে আমরা শতবর্ষের প্রোগ্রাম নিয়েছি। ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন কিভাবে হবে সেই পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করেছি ডেল্টা প্লান ২১০০।’ সেই সূত্র ধরে নির্দ্বিধায় বলা যায়, বর্তমান অগ্রযাত্রাকে টেকসই রুপ দিতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে রক্ষা পেতে ডেল্টা প্লান ২১০০ একটি সুদূরপ্রসারী ও যুগান্তকারী পরিকল্পনা।’

জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে বদ্বীপ পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্লান ২১০০ তে ছয়টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে: উপকূলীয় অঞ্চল, নদী অঞ্চল ও মোহনা, নগর এলাকাসমূহ, পার্বত্য চট্রগাম অঞ্চল, হাওড় এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল এবং ক্রস কাটিং অঞ্চল। এই ৬টি হটস্পট বিপরীতে ৩৩ ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায়, হটস্পটভিত্তিক যে ৩৩টি চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে এর মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য চিহ্নিত ৮টি চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, নদী ও উপকূলীয় এলাকার ভাঙন, স্বাদু পানি প্রাপ্যতা, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং পরিবেশের অবনমন। বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য চিহ্নিত ৫টি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, বন্যা ও জলাবদ্ধতা, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পরিবেশের অবনমন। হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য চিহ্নিত ৫টি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, আকস্মিক বা মৌসুমি বন্যা, জলাবদ্ধতা ও অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন, অপর্যাপ্ত পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পরিবেশের অবনমন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য ৫টি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- স্বাদু পানির স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, পরিবেশের অবনমন এবং ক্রমহ্রাসমান জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। নদী এবং মোহনা অঞ্চলের ৫টি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- বন্যা, পানি দূষিত হওয়া, পরিবেশের অবনমন, পলি ব্যবস্থাপনা ও নৌ- পরিবহন এবং নদীগর্ভের পরিবর্তন-ভাঙন ও নতুন চর। আর নগরাঞ্চলের জন্য ৫টি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ভূমিক্ষয় ও বন্যা, স্বাদু পানির পর্যাপ্ততা, পরিবেশের অবনমন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

ডেল্টা প্লানকে মাথায় রেখেই সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ব্যবস্থাপনা, নদী শাসন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি তথা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় অঞ্চলভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং ভবিষ্যতে আরো প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে অন্যান্য যেকোনও দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদী ব্যবস্থাপনা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ও ঝুকিপূর্ণ। পৃথিবীর যে কোনও নদীর তুলনায় ব্রক্ষ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অনেক বেশি ভয়ংকর। যে কোনও সময় এর রুদ্রমূর্তি যে কোনও পানি ব্যবস্থাপনাকে তছনছ করে দিতে পারে। প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ বছর ও ঋতুকাল বিবেচনা করলে বছরের সংক্ষিপ্ত একটা সময় পাওয়া যায় নদী তীর সংরক্ষনমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে। এছাড়া আর্থিক বরাদ্দের স্বল্পতা সময় মতো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের এই সন্ধিক্ষণে শত বাধা-বিপত্তি আর প্রতিকূলতাকে সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সোনার বাংলা বির্নিমাণে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অবিরাম পথচলা। স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নদী ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সেচ ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্বারোপ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রথম বাজেটের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে সেচ ও পানি সম্পদ খাতে পর্যায়ক্রমে ২০ লক্ষ ও ২০.২০ লক্ষ মোট ৪০.২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয় (প্রথম পর্যায় ১৯৭২ হতে জুন পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্যায় ১৯৭২-১৯৭৩ মুল বাজেট। সূত্রঃ প্রথম বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মারক গ্রন্থ ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭২)। যদিও পুনর্বাসন কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল দীর্ঘ নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান জোগান দেওয়া এবং ধ্বংশলীলার ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠা তারপরও সেই পুনর্বাসন কর্মসূচিতে সেচ ও পানি সম্পদ খাতে বরাদ্দ প্রমাণ করে পানি সম্পদ উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু আন্তরিকতা ও ভালোবাসা। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ব্যবস্থাপনা তথা পানি সম্পদ উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর যে দর্শন ছিল তার বহিঃপ্রকাশ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর দূরদর্শী পরিকল্পনা ডেল্টা প্লান ২১০০। ডেল্টা প্লান ২১০০ বাস্তবায়নে যে সমস্ত পরিকল্পনা প্রহণ করা হয়েছে তার সিংহভাগ দায়িত্ব পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যোগ্য অংশীদার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। তিস্তা ব্যারেজের মতো ছোট বড় সেচ প্রকল্পগুলো প্রকল্প এলাকার কৃষি অর্থনীতিকে প্রাণ দিয়েছে। নদীর গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় শুধু জনপদকে রক্ষা করছে না বরং সংশ্লিষ্ট এলাকা তথা দেশের কৃষ্টি, কালচার এবং ঐতিহ্যকে লালন করছে। পোল্ডার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ঘটেছে এবং জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।  বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল কুতুবদিয়া, নোয়াখালী ও ভোলা এলাকায় নতুন নতুন চর সৃষ্টি করে দেশের আয়তন বৃদ্ধিতে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। ব্রক্ষ্মপুত্র, পদ্মা ও মেঘনা অববাহিকায় বৃষ্টির পানি ধরে এবং নদীর মিঠা পানি ব্যবহার করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে পানি রপ্তানি করার স্বপ্ন দেখছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।

 

লেখক- সিনিয়র সহকারী সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *